• Breaking News

    Saturday, February 11, 2017

    জেনে রাখুন ডায়াবেটিস রোগ কি ভাবে হয়!

    জেনে রাখুন ডায়াবেটিস রোগ কি ভাবে হয়!



    ডায়াবেটিস একটি বিপাকজনিত রোগ। মানব দেহের ইনসুলিন নামের হরমোনের সম্পূর্ণ বা অপেক্ষিক ঘাটতির কারণে বিপাকজনিত গোলযোগ সৃষ্টি হয়ে রক্তে গ্লুকোজের পরিমাণ বৃদ্ধি পায় এবং এক সময় তা প্রস্রাবের সঙ্গে বেরিয়ে আসে। এইভাবে ডায়াবেটিস রোগ হয়ে থাকে।
    যাদের ডায়াবেটিস হতে পারে
    • যাদের বংশে ডায়াবেটিস আছে
    • যাদের ওজন অনেক বেশী এবং যারা মেদবহুল
    • যাদের উচ্চ রক্ত চাপ রয়েছে
    • যাদের রক্তে কোলেস্টেরল বেশী
    • যারা ব্যায়াম বা শারীরিক পরিশ্রমের কাজ করেন না
    • তাছাড়া বয়সগত কারণেও ডায়াবেটিস হতে পারে
    লক্ষণ
    • ঘন ঘন প্রস্রাব হওয়া
    • খুব বেশী পিপাসা লাগা
    • বেশী ক্ষুধা পাওয়া
    • যথেষ্ট খাওয়া সত্বেও ওজন কমে যাওয়া
    • ক্লান্তি বা দূর্বলতা বোধ করা
    • ক্ষত শুকাতে বিলম্ব হওয়া
    • খোশ-পাঁচড়া, ফোঁড়া জাতীয় চর্মরোগ দেখা দেওয়া
    • চোখে কম দেখা
    • তবে বয়স্ক রোগীদের ক্ষেত্রে অনেক সময় এ সব লক্ষণ প্রকাশ নাও পেতে পারে, তখন সাধারণ স্বাস্থ্য পরীক্ষাতেই ডায়াবেটিস ধরা পড়ে।
    ডায়াবেটিস নিয়ন্ত্রণ না করলে যেসব অঙ্গ ক্ষতিগ্রস্থ হতে পারে
    • চোখ
    • নার্ভ
    • কিডনী
    • পা
    • যৌন-ক্ষমতা হ্রাস পাওয়া
    • সর্বোপরি স্বাভাবিক মাত্রার চেয়ে অনেক কম গ্লুকোজ ও স্বাভাবিক মাত্রার চেয়ে অনেক বেশী গ্লুকোজ হতে পারে।
    • হৃদরোগে আক্রান্ত হওয়ার আশংকা থেকে যায় অনেক বেশী।
    ডায়াবেটিস নিয়ন্ত্রণে রাখলে যেসব উপকার পাওয়া যায়
    • সামগ্রিকভাবে ভাল বোধ করা
    • শরীর সুস্থ থাকা
    • প্রচুর প্রাণশক্তি পাওয়া যায়
    • বারবার প্রস্রাবের বেগ না হওয়া
    • প্রয়োজনের বেশী তৃষ্ণা না লাগা
    • শরীরে ম্যাজ ম্যাজ ভাব ও দুর্বলতা না থাকা
    • অসুস্থ হওয়ার আংশকা কমে যাওয়া
    • চোখ, কিডনী ও স্নায়ুর ক্ষতি এবং হৃদরোগ ও ফুসফুসসহ শরীরে জটিল যে কোন রোগ হবার আশংকা কমে যাওয়া।
    ডায়াবেটিসের ক্ষতি থেকে বাঁচার উপায়
    • পারিবারিকভাবে যাদের এ রোগ হবার ঝুঁকি আছে- তারাও যদি খাদ্যভাস, শরীরের ওজন, শারীরিক পরিশ্রম বা নিয়মিত ব্যায়াম করে তাহলে হয়তোবা তারাও এ রোগের আক্রমন থেকে বেঁচে যেতে পারে। আক্রান্ত হলেও তার গভীরতা হবে তুলনামূলক কম।
    • যদি কেউ এ রোগে আক্রান্ত হয়েই যায়- তাহলেও ডাক্তারের পরামর্শ মতো চললে অনেক ক্ষতিকারক দিক থেকে বেঁচে থাকা।
    জীবনযাত্রার পরিবর্তন
    • ডায়াবেটিক রোগীদের সুস্থতার জন্য খাদ্যভাস নিয়ন্ত্রণ
    • নিয়মিত ব্যায়াম করা
    • ওজন নিয়ন্ত্রণে রাখা
    • ধুমপান ও মাদকাসক্তি থেকে বিরত থাকা।
    নিজের প্রতি যত্নবান হওয়া
    • শরীরে কোন রকম ঘা যাতে না হয় খেয়াল রাখা
    • বাথরুম পরিচ্ছন্ন এবং জীবানুমুক্ত রাখা
    • পাবলিক টয়লেট ব্যবহারে বিশেষ সতর্ক থাকা
    • পায়ে চাপ পড়ে এমন জুতো না পরা
    • যে কোন ছোটখাট ঘা বা ইনফেকশন হলেই ডাক্তারকে জানাতে হবে।
    করণীয়
    • নিয়মিত ডাক্তারের উপদেশ মত চলা, নিয়ন্ত্রিত ও সুশৃংখল জীবন যাপন করা।
    • রক্তের গ্লুকোজ নির্ধারিত মাত্রার মধ্যে ধরে রাখই ডায়াবেটিস চিকিৎসার মূল লক্ষ্য।
    • এই মাত্রাটি কি হবে, তা প্রতিটি ডায়াবেটিস রোগীর জন্য চিকিৎসক নির্ধারণ করে দিয়ে থাকে।
    • প্রতিটি ডায়াবেটিস রোগীর জন্য চিকিৎসকরা সাধারণতঃ আলাদা আলাদা ধরনের চিকিৎসাপত্র দিয়ে থাকে যাতে প্রতিটি রোগীই তার জন্য নির্ধারিত মাত্রার গ্লুকোজ রক্তে বজায় রাখতে পারে।
    • এজন্যে ডায়াবেটিস শনাক্ত হওয়া মাত্র দেরি না করে দ্রুত চিকিৎসকের পরামর্শ নেওয়া বুদ্ধিমানের কাজ।

    সচরাচর জিজ্ঞাসা

    প্রশ্ন.১.কাদের ডায়াবেটিস হতে পারে?
    উত্তর.যে কেউ যে কোন বয়সে যে কোন সময় ডায়াবেটিসে আক্রান্ত হতে পারেন। তবে তিন শ্রেণীর লোকের ডায়াবেটিস হওয়ার সম্ভাবনা বেশী থাকে:
    • যাদের বংশে, যেমন-বাবা-মা বা রক্ত সর্ম্পকিত নিকট আত্মীয়ের ডায়াবেটিস আছে
    • যাদের ওজন অনেক বেশী
    • যারা ব্যায়াম বা শারীরিক পরিশ্রমের কোন কাজ করেন না
    • বহুদিন ধরে কর্টিনোল জাতীয় ঔষধ ব্যবহার করলে
    প্রশ্ন.২. কি কি অবস্থায় ডায়াবেটিস প্রকাশ পাওয়ার সম্ভাবনা থাকে?
    উত্তর.
    • শারীরিক স্থূলতা
    • গর্ভাবস্থা
    • ক্ষত
    • আঘাত
    • অস্ত্রোপাচার
    • মানসিক বিপর্যয়
    • রক্তনালীর অসু্‌স্থতার কারণে হঠাৎ করে মস্তিষ্কের রোগ
    প্রশ্ন.৩. অনিয়ন্ত্রিত ডায়াবেটিস থেকে কি ধরনের বিপদ হতে পারে?
    উত্তর.
    • পক্ষাঘাত
    • স্নায়ুতন্ত্রের জটিলতা
    • হুদরোগ
    • পায়ে পচনশীল ক্ষত
    • চক্ষুরোগ
    • মুত্রাশয়ের রোগ, প্রস্রাবে আমিষ বের হওয়া, পরবর্তীতে কিডনীর কার্যক্ষমতা লোপ পাওয়া
    • পাতলা পায়খানা
    • যক্ষা
    • মাড়ির প্রদাহ
    • চুলকানি
    • ফোঁড়া
    • পাঁচড়া
    • রোগের কারণে যৌন ক্ষমতা কমে যাওয়া
    • মহিলাদের ক্ষেত্রে বেশী ওজনের শিশু, মৃত শিশুর জন্ম, অকালে সন্তান প্রসব, জন্মের পরই শিশুর মৃত্যু এবং নানা ধরনের জন্ম ত্রটি দেখা দিতে পারে
    প্রশ্ন.৪. কিভাবে বুঝবেন আপনার ডায়াবেটিস নিয়ন্ত্রণে আছে?
    উত্তর.ডায়াবেটিস নিয়ন্ত্রণে আছে কিনা বোঝার উপায় হচ্ছে রক্তের শর্করার (গ্লুকোজ) মাত্রা পরীক্ষা করে দেখা। যদি খালি পেটে রক্তের শর্করার (গ্লুকোজ) মাত্রা ৬.১ মিলি মোল/লিটার থাকে এবং খাওয়ার পর ৮.০ মিলি মোল/লিটার পর্যন্ত হয়, তবে ডায়াবেটিস খুব ভাল নিয়ন্ত্রণে আছে বলে মনে করতে হবে। খাবারের পর রক্তে শর্করার (গ্লুকোজ) মাত্রা ১০.০ মিলি মোল/লিটার পর্যন্ত হলে ডায়াবেটিস মোটামুটি নিয়ন্ত্রণে আছে বলে মনে করতে হবে। রক্তের শর্করার (গ্লুকোজ) মাত্রা এর চেয়ে বেশী হওয়ার অর্থ হলো ডায়াবেটিন নিয়ন্ত্রণে নাই।
    প্রশ্ন.৫. ডায়াবেটিস কি সারানো যায়?
    উত্তর.ডায়াবেটিস রোগ সারে না । এ রোগ সারা জীবনের রোগ। তবে আধুনিক চিকিৎসা ব্যবস্থা গ্রহন করলে এ রোগকে খুব ভালভাবে নিয়ন্ত্রণে রাখা যায়। ডায়াবেটিস রোগ নিয়ন্ত্রণে থাকলে প্রায় স্বাভাবিক কর্মঠ জীবন যাপন করা যায়।

    No comments:

    Post a Comment