বিষণ্নতা শরীর ও মনের অসুখ-Bangla Health Tips

একটি কেস স্টাডি
চিত্তবাবুর ইদানীং কোনো কিছু ঠিকমতো হজম হয় না। বদহজম সবসময় লেগেই থাকে। চিত্তবাবুর এমন অবস্থা আগে কখনো হতো না। চিত্তবাবু যা খেতেন তাই অনায়াসে হজম করে নিতে পারতেন। চিত্তবাবুর প্রিয় খাবার হলো খাসির গোশতের সাথে ভুনা খিচুড়ি আর খাঁটি ঘি দিয়ে তৈরি হালুয়া। চিত্তবাবু এসব খাবার প্রায় প্রতি সপ্তাহেই খেতেন। হজমও ভালো হতো। কিন্তু বেচারা এখন আর তার প্রিয় খাবার খেতে পারেন না। খেলেই দেখা দেয় বিভিন্ন সমস্যা। ডাক্তার চিত্তবাবুকে যতবারই বলেন, আপনার কিছু হয়নি, টেনশন করবেন না, সব ঠিক হয়ে যাবে। কিন্তু চিত্তবাবুর মন ভরে না ডাক্তারের কথায়। তাই তো তিনি এক ডাক্তার থেকে অন্য ডাক্তারের কাছে ছোটেন। পরে এক ডাক্তার আমার কাছে চিত্তবাবুকে রেফার করেন। চিত্তবাবু তো আশ্চর্য। বলে আমার সমস্যা হজমের আর আমাকে পাঠানো হয়েছে মানসিক চিকিৎসকের কাছে। পরে চিত্তবাবুর বিভিন্ন রকম পরীক্ষা-নিরীক্ষার রিপোর্ট দেখলাম। এন্ডোসকপি করেছেন তিনি তিন ডাক্তারকে দিয়ে তিনবার। তার আলট্রাসনোগ্রাম রিপোর্ট দেখলাম স্বাভাবিক। ব্লাড, ইউরিন, স্টুল সব রিপোর্টই নরমাল। চিত্তবাবুর গ্যাসট্রিকেরও কোনো সমস্যা হয়নি। বিভিন্ন ইতিহাস নিয়ে জানা গেল চিত্তবাবুর ঘুম ঠিকমতো হয় না। ভোর রাতে ঘুম ভেঙে যায়। কোনো খাবার ঠিকঠাকমতো হজম হয় না। অ্যাসিডিটি হয়, মাঝে মধ্যে শরীর ব্যথাও করে। মাঝে মধ্যে তার নাকি মনটা খুব খালি খালি লাগে তবে ইদানীং প্রায় দুই মাস ধরে তার কোনো কাজকর্ম করতে মন চায় না। তার কেন জানি মরতে মন চায় আত্মহত্যা করতে মন চয়। মনে হয় পৃথিবীতে থেকে আর লাভ কী। যা-ই হোক চিত্তবাবুর এই ৫০ বছর বয়সে তাকে থাকতে হয় সম্পূর্ণ একা খালি বাড়িতে। ছেলেমেয়েরা সবাই বিদেশে। চিত্তবাবুর সব ইতিহাস নিয়ে পর্যালোচনা করে বোঝা গেলো, তিনি মানসিক রোগ বিষণ্নতায় আক্রান্ত হতে শুরু করেছেন। তাকে চিকিৎসা দেয়া হলো। এখন তিনি আগের চেয়ে অনেক ভালো আছেন। তার হজম শক্তি বেড়েছে। আত্মহত্যার প্রবণতা কমেছে। এখন আর তিনি আগের মতো ডাক্তার বদলান না।
চিত্তবাবুর ইদানীং কোনো কিছু ঠিকমতো হজম হয় না। বদহজম সবসময় লেগেই থাকে। চিত্তবাবুর এমন অবস্থা আগে কখনো হতো না। চিত্তবাবু যা খেতেন তাই অনায়াসে হজম করে নিতে পারতেন। চিত্তবাবুর প্রিয় খাবার হলো খাসির গোশতের সাথে ভুনা খিচুড়ি আর খাঁটি ঘি দিয়ে তৈরি হালুয়া। চিত্তবাবু এসব খাবার প্রায় প্রতি সপ্তাহেই খেতেন। হজমও ভালো হতো। কিন্তু বেচারা এখন আর তার প্রিয় খাবার খেতে পারেন না। খেলেই দেখা দেয় বিভিন্ন সমস্যা। ডাক্তার চিত্তবাবুকে যতবারই বলেন, আপনার কিছু হয়নি, টেনশন করবেন না, সব ঠিক হয়ে যাবে। কিন্তু চিত্তবাবুর মন ভরে না ডাক্তারের কথায়। তাই তো তিনি এক ডাক্তার থেকে অন্য ডাক্তারের কাছে ছোটেন। পরে এক ডাক্তার আমার কাছে চিত্তবাবুকে রেফার করেন। চিত্তবাবু তো আশ্চর্য। বলে আমার সমস্যা হজমের আর আমাকে পাঠানো হয়েছে মানসিক চিকিৎসকের কাছে। পরে চিত্তবাবুর বিভিন্ন রকম পরীক্ষা-নিরীক্ষার রিপোর্ট দেখলাম। এন্ডোসকপি করেছেন তিনি তিন ডাক্তারকে দিয়ে তিনবার। তার আলট্রাসনোগ্রাম রিপোর্ট দেখলাম স্বাভাবিক। ব্লাড, ইউরিন, স্টুল সব রিপোর্টই নরমাল। চিত্তবাবুর গ্যাসট্রিকেরও কোনো সমস্যা হয়নি। বিভিন্ন ইতিহাস নিয়ে জানা গেল চিত্তবাবুর ঘুম ঠিকমতো হয় না। ভোর রাতে ঘুম ভেঙে যায়। কোনো খাবার ঠিকঠাকমতো হজম হয় না। অ্যাসিডিটি হয়, মাঝে মধ্যে শরীর ব্যথাও করে। মাঝে মধ্যে তার নাকি মনটা খুব খালি খালি লাগে তবে ইদানীং প্রায় দুই মাস ধরে তার কোনো কাজকর্ম করতে মন চায় না। তার কেন জানি মরতে মন চায় আত্মহত্যা করতে মন চয়। মনে হয় পৃথিবীতে থেকে আর লাভ কী। যা-ই হোক চিত্তবাবুর এই ৫০ বছর বয়সে তাকে থাকতে হয় সম্পূর্ণ একা খালি বাড়িতে। ছেলেমেয়েরা সবাই বিদেশে। চিত্তবাবুর সব ইতিহাস নিয়ে পর্যালোচনা করে বোঝা গেলো, তিনি মানসিক রোগ বিষণ্নতায় আক্রান্ত হতে শুরু করেছেন। তাকে চিকিৎসা দেয়া হলো। এখন তিনি আগের চেয়ে অনেক ভালো আছেন। তার হজম শক্তি বেড়েছে। আত্মহত্যার প্রবণতা কমেছে। এখন আর তিনি আগের মতো ডাক্তার বদলান না।
প্রিয় পাঠক, আমাদের দেশে চিত্তবাবুর মতো এমন অনেক মানুষ আছেন যারা মানসিক রোগ বিষণ্নতার কারণে শারীরিক বিভিন্ন সমস্যায় ভুগছেন। তাই এমন রোগীর অন্তত একবার হলেও মানসিক চিকিৎসকের পরামর্শ গ্রহণ করা প্রয়োজন। কারণ বিষণ্নতার কারণেও শারীরিক বিভিন্ন অসুখের মতো অবস্থা দেখা দিতে পারে। মানিসক রোগ বিষণ্নতা নানা কারণেই সৃষ্টি হতে পারে। কারো কারো আবার বংশগতভাবে বিষণ্নতা রোগের প্রবণতা থাকে। কারো কারো আবার সম্পর্কের অবনতি, বিচ্ছেদ, একাকিত্ব, ডিভোর্স ইত্যাদি কারণে বিষণ্নতা হয়ে থাকে। তবে সব ক্ষেত্রেই যে বিষণ্নতা রোগ সৃষ্টি হওয়ার পেছনে কোনো না কোনো কারণ থাকবে এমন কোনো কথা নেই। কোনো কারণ ছাড়াও বিষণ্নতা রোগটি সৃষ্টি হতে পারে। বিষণ্নতা খুবই ভয়ানক এক মনোব্যাধি। এ রোগে যে আক্রান্ত হয় সে বোঝে তার অসহনীয় কষ্ট-জ্বালা।
নারী-পুরুষ সবারই এ রোগটি হতে পারে। এ রোগটি মানুষের কর্মশক্তিকে নষ্ট করে, নষ্ট করে যৌনশক্তিকে। বিষণ্নতা রোগের চিকিৎসা করানো প্রয়োজন। মানসিক রোগ বিষণ্নতা হলে বিভিন্ন রকম উপসর্গ দেখা যায়। যেমন-
* হজম শক্তির গোলমাল, অ্যাসিডিটি হওয়া, কোষ্ঠকাঠিন্য হওয়া।
* নেতিবাচক অনুভূতি।
* ঘুমের সমস্যা, বিশেষ করে শেষ রাতে ঘুম ভেঙে গিয়ে আর ঘুম না আসা।
* কাজকর্মের অবনতি।
* সবসময় মৃত্যুচিন্তা।
* মন খালি খালি লাগা।
* দীর্ঘমেয়াদি শারীরিক ব্যথা-বেদনা ইত্যাদি।
* নেতিবাচক অনুভূতি।
* ঘুমের সমস্যা, বিশেষ করে শেষ রাতে ঘুম ভেঙে গিয়ে আর ঘুম না আসা।
* কাজকর্মের অবনতি।
* সবসময় মৃত্যুচিন্তা।
* মন খালি খালি লাগা।
* দীর্ঘমেয়াদি শারীরিক ব্যথা-বেদনা ইত্যাদি।
কারো বিষণ্নতা দেখা দিলে তার উচিত হবে একজন মানসিক বিশেষজ্ঞের পরামর্শ গ্রহণ করা এবং প্রয়োজনে চিকিৎসা শুরু করা। তাই এ ব্যাপারে সবারই সজাগ হওয়া প্রয়োজন।
————————–
অধ্যাপক ডা. এ এইচ মোহাম্মদ ফিরোজ
লেখকঃ পরিচালক, জাতীয় মানসিক স্বাস্থ্য ইনস্টিটিউট, ঢাকা
দৈনিক নয়া দিগন্ত, ১৬ মার্চ, ২০০৮
অধ্যাপক ডা. এ এইচ মোহাম্মদ ফিরোজ
লেখকঃ পরিচালক, জাতীয় মানসিক স্বাস্থ্য ইনস্টিটিউট, ঢাকা
দৈনিক নয়া দিগন্ত, ১৬ মার্চ, ২০০৮
No comments:
Post a Comment