• Breaking News

    Sunday, February 12, 2017

    নিয়ম মেনে জীবন রক্ষাকারী ওষুধ সেবন জরুরি

    নিয়ম মেনে জীবন রক্ষাকারী ওষুধ সেবন জরুরি



    অ্যালার্জি, র্যাশ, হাঁপানি থেকে শুরু করে বিভিন্ন রকম আর্থ্রাইটিস রোগে প্রায়ই ব্যবহূত হয় স্টেরয়েড জাতীয় ওষুধ। এ ছাড়া হঠাৎ অজ্ঞান হলে কিংবা রক্তচাপ কমে গেলেও জীবন রক্ষাকারী ওষুধ হিসেবে ব্যবহূত হয় এই স্টেরয়েড। বাজারে প্রচলিত মোটা হওয়ার ওষুধ, ব্যথা-বেদনা কমানোর টোটকা ইত্যাদিতেও রয়েছে এই স্টেরয়েড।
    করটিসন, হাইড্রোকরটিসন, প্রেডনিসলন, ডেক্সামিথাসন ইত্যাদি বিভিন্ন নামে স্টেরয়েড ট্যাবলেট, ক্রিম-অয়েন্টমেন্ট, ইনজেকশন, সেপ্র, ইনহেলার রয়েছে। বিভিন্ন সমস্যায় চিকিৎসকেরা এসব ওষুধ ব্যবস্থাপত্রে দিয়ে থাকেন। কিন্তু বহুরোগ উপশমকারী এবং জীবন রক্ষাকারী এই ওষুধ একেবারে পার্শ্বপ্রতিক্রিয়ামুক্ত নয়। প্রায়ই দেখা যায় যে সঠিক ও নিয়মিত পরামর্শের অভাবে স্টেরয়েড ব্যবহারকারী রোগীরা বিভিন্ন জটিলতায় আক্রান্ত হন।
    তাই জেনে নেওয়া উচিত যে এই ওষুধের অতি ব্যবহার, অপব্যবহার বা দীর্ঘমেয়াদি ব্যবহারের কারণে কী কী সমস্যা হতে পারে ও তার প্রতিকার কী?
      দীর্ঘদিন স্টেরয়েড ব্যবহারের কারণে ওজন বৃদ্ধি পায়, উচ্চ রক্তচাপ দেখা দেয় বা অনিয়ন্ত্রিত হয়ে পড়ে, রক্তে শর্করা বাড়ে।
     মুখ, গলা, ঘাড়, বুকে-পেটে চর্বি জমে।
     হাত-পায়ের মাংসপেশি শুকিয়ে আসে এবং পেশির দুর্বলতা দেখা দেয়।
     গ্লুকোমার অবনতি বা চোখের ছানিজনিত দৃষ্টিশক্তির অবনতি ঘটে।
     বিষণ্নতা, কখনো বা অস্থিরতা এবং ঘন ঘন মেজাজের তারতম্য ঘটে।
    রোগপ্রতিরোধ ক্ষমতা হ্রাস পায়। ফলে বারবার সংক্রমণ হয়।
     কাটা-ছেঁড়া বা ক্ষত সারতে দেরি হয়।
     হাড়ের ঘনত্ব কমে ও অস্টিওপেরোসিস হয়ে সহজে হাড় ভঙ্গুর হয়ে যায়।
    মেয়েদের মাসিকের জটিলতা, মুখে বা শরীরে অবাঞ্ছিত লোম বৃদ্ধি।
     চুল পড়া বাড়ে, ত্বক পাতলা হয়ে যায়, তলপেটে ফাটা দাগ হয়, ব্রণও বেশি হয়।
    সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ বিষয় হলো, স্টেরয়েড ওষুধ সেবন করার কারণে দেহের স্বাভাবিক স্টেরয়েড হরমোন নিঃসরণের ছন্দপতন ঘটে। মস্তিষ্কের পিটুইটারি গ্রন্থির মাধ্যমে অ্যাড্রিনাল গ্রন্থিও আর প্রয়োজনমাফিক হরমোন তৈরি করতে পারে না। অর্থাৎ রোগী স্টেরয়েড নির্ভর হয়ে পড়ে। হঠাৎ ওষুধ ছেড়ে দিলে বা ভুলে গেলে বমি, দুর্বলতা, পেট ব্যথা, রক্তে লবণের তারতম্য, রক্তচাপ কমে গিয়ে হঠাৎ অজ্ঞান হওয়ার মতো পরিস্থিতির সৃষ্টি হতে পারে।
    তাই স্টেরয়েড সেবনের আগে ভালোভাবে জেনে রাখুন:
    -হঠাৎ বেড়ে যাওয়া শ্বাসকষ্ট বা ব্যথা, অ্যালার্জি কমাতে যে স্টেরয়েড দেওয়া হয় তা সাময়িক ও দীর্ঘদিন ব্যবহারের জন্য নয়। চিকিৎসকের কাছ থেকে এর মাত্রা ও মেয়াদ ঠিকভাবে জেনে নিন
    -আর্থ্রাইটিস বা ইমিউন সিস্টেমের জটিলতায় দীর্ঘ মেয়াদে ব্যবহার করা হলে এর পার্শ্বপ্রতিক্রিয়া যথাসম্ভব কমানোর বিষয়ে পরমর্শ নিন। যেমন তিন মাসের বেশি ব্যবহারে হাড় ক্ষয় কমানোর ওষুধ ব্যবহার, রক্তচাপ ও রক্তে শর্করা মেপে বারবার এসবের ওষুধ ঠিক করে নেওয়া ইত্যাদি।
    -যাঁরা দীর্ঘদিন এ ধরনের ওষুধ সেবন করছেন, তাঁদের ধাপে ধাপে চিকিৎসকের পরামর্শমতো ওষুধ কমিয়ে আনতে হবে, কোনোভাবেই একবারে ওষুধ বন্ধ করা যাবে না।
    ডা. নাজমুল কবীর কোরেশী
    মেডিসিন বিভাগ, ইউনাইটেড হাসপাতাল।
    সূত্র: দৈনিক প্রথম আলো, ডিসেম্বর ৩০, ২০১৩

    No comments:

    Post a Comment