• Breaking News

    Thursday, February 9, 2017

    গর্ভবতী মায়ের যত্ন

    গর্ভবতী মায়ের যত্ন প্রক্রিয়া -Bangla Health Tips




    গর্ভের শিশুর শারীরিক ও মানসিক পরিপূর্ণ বিকাশের পূর্বশর্ত হচ্ছে মায়ের সুস্থতা সুনিশ্চিতকরণ। এ জন্য একজন নারীকে নিজেই যেমন হতে হয় স্বাস্থ্য সম্পর্কে সচেতন, তেমিন গর্ভবতী মায়েদের প্রতি যত্নশীল হতে হয় পরিবারের সবার।

    গর্ভবতী মায়ের পরিচর্যা গর্ভস্থ সন্তান ও মা’ উভয়ের জন্যই গুরুত্বপূর্ণ।২০০৯ সালের হিসাব অনুযায়ী বাংলাদেশে বছরে প্রায় ২৮০০০ মহিলা গর্ভসঞ্চারজনিত কারণে মৃত্যুবরণ করেন। পাশাপাশি নবজাতক মৃত্যুর হার প্রতি হাজারে ৮৩ জন।
    মা ও শিশুর এ অকাল মৃত্যুর অধিকাংশই প্রতিরোধযোগ্য। কিন্তু এ প্রতিরোধ আমাদের দেশে সম্ভব হয়ে উঠছে না মূলত স্বাস্থ্য, শিক্ষা ও সচেতনতার অভাবে। তাই গর্ভবতী মা-এর যত্ন সম্বন্ধে নিজেকে জানতে হবে ও অনেক জানতে সাহায্য করতে হবে

    গর্ভাবস্থায় করণীয় :

    চিকিৎসকের সাহায্যে গর্ভাবস্থা সম্পর্কে নিশ্চিত হলে চিকিৎসকের পরামর্শ অনুযায়ী প্রতিমাসে চেকআপে থাকতে হবে। নির্ধারিত সময়ে টিটালল ইনজেকশনও নিতে হবে।
    গর্ভাবস্থায় ঘরের নরমাল কাজকর্ম করে দিনে ২ ঘণ্টা পূর্ণ বিশ্রাম, রাতে আট ঘণ্টা ঘুম ও বিকালে খোলা বাতাসে কিছুক্ষণ হাঁটলে খুব ভালো। গর্ভাবস্থায় প্রথম ৩/৪ মাস অতিরিক্ত পরিশ্রম করলে গর্ভপাতের সম্ভাবনা ভেড়ে যায় আর শেষ তিন মাস পরিশ্রম বেশি করলে অপুষ্ট শিশু জন্ম হওয়ার সম্ভাবনা থাকে।
    রোজ ভালো করে গোসল করতে গিয়ে স্তনের অগ্রভাগ নরম চামড়া কোল্ড ক্রিমের সাহায্যে তুলে ফেলতে হবে এবং হাতের বুড়া আঙুল ও তর্জনীর মাধ্যমে স্তনের বোঁটাকে উপরে তোলার চেষ্টা করতে হবে।
    এ সময় চাপা জামা-কাপড় পড়া উচিত নয়। হাসপাতালে যাওয়ার আগেই নিজের ও শিশুর প্রয়োজনীয় কাঁথাকাপড় গুছিয়ে রাখবেন। দীর্ঘ ভ্রমণ ও উড়োজাহাজে চড়তে হলে তাও চিকিৎসকের পরমার্শ অনুযায়ী ব্যবস্থা করতে হবে।
    গর্ভাবস্থায় পা অস্বাভাবিক ফুলে গেলে, কম বেশি রক্তপাত হবে, প্রস্রাব প্রয়োজনের তুলনায় কম হলে, চোখ হলুদ হয়ে গেলে, সন্তানের নড়াচড়া কমে গেলে, চোখে ঝাঁপসা দেখলে ঘুম খুব কম হলে, ঘন ঘন মাথাব্যথা হলে, অন্য কোনো মারাত্মক সমস্যা হলে সত্ব্বর চিকিৎসকের স্মরণাপন্ন হবেন।

    গর্ভাবস্থায় কিছু স্বাভাবিক সমস্যা :

    অরুচি ও বমি বমি ভাব হতেই পারে। তাই যা খেতে ভালো লাগে তাই খাবেন। তবে ঢক ঢক করে ডাল, দুধ ইত্যাদ না খাওয়াই ভালো। এ সময় বুকজ্বালা ও বদহজম একটা স্বাভাবিক সিমটম তাই হালকা সহজপাচ্য অথচ পুষ্টিকর খাবার খেতে হবে।
    তাছাড়া প্রচুর পরিমাণে পানীয় ও টাটকা ফল, বেল, কলা পেয়ারা দুধ-ভাত-কলা/দুধ-আটার রুটি ইসুবগুলের ভূষি খাওয়া যায় এতে কোষ্ঠকাঠিন্য রোধ হয়।
    এ সময় কোমর ব্যথার জন্য শাক, ছোট মাছ, দুধ, ডিম, মাখন অর্থাৎ ভিটামিন ডি ও ক্যালসিয়াম সমৃদ্ধ খাবার খাওয়া এবং বুক ধড়ফড়, শ্বাসকষ্ট, চুলকানি, মাড়িস্ফীতি ও রক্তক্ষরণ, পাইলস ও পায়ের শিরাস্ফীতি হলে দ্রুত চিকিৎসকের পরামর্শ নেবেন।

    আশঙ্কাজনক গর্ভাবস্থা :

    যে যে অবস্থা থাকলে ঘরে প্রসবের ব্যবস্থা করানো উচিত নয় সেগুলো_ ১৬ বছরের আগে বা ৩০ বছরের পরে প্রথম গর্ভাবস্থা, পঞ্চম বা ততোধিক গর্ভাবস্থা। ডায়াবেটিস, কিডনির অসুস্থতা কিংবা হার্টের অসুস্থতা সম্বলিত গর্ভাবস্থা।
    অশিক্ষিত ও নিম্নবিত্ত পরিবারের গর্ভবতী, যারা কোনোদিন ডাক্তার দেখায় না, বিবাহের অনেকদিন পর অধিক বয়সে গর্ভাবস্থা, পূর্ববর্তী গর্ভে সিজারিয়ান অপারেশন ছিল বা জটিল সমস্যা ছিল, রক্তচাপ বেশি (১৪০/৯০ মিঃ মিঃ মারকারির উপরে) ।
    রক্তস্রাব, মারাত্মক রক্তশূন্যতা, প্রসব হওয়ার নির্ধারিত তারিখের পর ১০-১৪ দিন অতিক্রান্ত হয়ে গেলে, জন্ডিস, যমজ সন্তান বা সন্তানের অস্বাভাবিক অবস্থান, প্রসবকাল ১৪-১৮ ঘণ্টার বেশি প্রলম্বিত হওয়া বাধাগ্রস্ত প্রসব, সঠিক সময়ের আগেই পানি ভাঙা, শিশুর নড়াচড়া গর্ভাবস্থায় বা প্রসবকালে নিয়মের চেয়ে কম হওয়া।

    গর্ভবতী মায়ের খাদ্য :

    প্রাপ্তবয়স্ক প্রতিটি নারীর দৈনিক ২১শ’ ৬০ কিলো- ক্যালরি খাদ্যের প্রয়োজন হলেও একজন গর্ভবতীর প্রয়োজন হয় তার চেয়ে ৩৫০ কিলো ক্যালরি খাদ্যের। তা না হলে শিশু অপুষ্টিতে ভুগে ও কম ওজন নিয়ে শিশু জন্মায় যার মৃত্যু আশঙ্কাজনক।
    এ সময় আমিষ জাতীয় খাবার, উদ্ভিজ্য চর্বি, যা পূরণে ভোজ্য তৈল, সয়াবিন, সরিষা বাদাম। ক্যালসিয়াম এর চাহিদা পূরণ করতে দুধ, স্টিমড ব্রকোলি, পনির, কম চর্বিযুক্ত ইয়োগট, এককাপ ক্যালসিয়ামযুক্ত অরেঞ্জ জুস বা সয় দুধ বা চার আউন্স ক্যান করা শ্যামন মাছ খেয়ে ক্যালসিয়ামের চাহিদা মেটাতে পারেন।
    আয়রন ও ফলিক এসিড যা কাঁচা কলা, কচুশাক, অন্যান্য ঘন সবুজ ও লাল শাক, মাছ, মাংস ও ডিমে রয়েছে। ভিটামিনের জন্য প্রচুর শাকসবজি, টক, মিষ্টি ফল, জুস খেতে হবে।
    পানি যা গর্ভস্থ শিশু, পুষ্টির সরবরাহ সঠিক রাখতে এবং শরীর থেকে বর্জ্য পদার্থসমূহ নিষ্কাষণে সহায়ক। তাই গর্ভবতীকে প্রতিদিন ১৫-২০ গ্লাস পানি পান করতে হবে তবে একবারে ২ গ্লাসের বেশি পানি পান করা যাবে না। শর্করা যা অধিক খেলে শরীরে ওজন বেড়ে যায় তাই অাঁশযুক্ত শর্করা যেমন ঢেঁকিছাঁটা চালের ভাত, গমের রুটি ইত্যাদি খাওয়া উচিত।
    আলু, ও মিষ্টি আলু স্বাস্থ্যসম্মত যা শর্করার চাহিদা পূরণের পাশাপাশি আমিষ লৌহ ও থায়ামিন, ভিটামিন সরবরাহের উল্লেখযোগ্য ভূমিকা রাখে। তবে শাকসবজি, ডিম, মাছ বা মাংস ভালো করে সিদ্ধ করে খেতে হবে।
    লিভার কিংবা লিভার জাত অন্য খাবার কম খেতে হবে। কারণ এগুলোতে উচ্চমাত্রায় ভিটামনি ‘এ’ থাকায় তা গর্ভস্থ শিশুর ক্ষতি করতে মায়ের অবাঞ্ছিত গর্ভপাত হওয়ার সম্ভাবনা থাকে।
    কারণ কিছু কিছু খাবার যেমন কাঁচা পেঁপে, আলু, ছোলা, গাজর, বিট, ফুলকপি, ধনেপাতা পুদিনাপাতা, চীনাবাদম, কাজু বাদাম, পেস্তা ইত্যাদিতে এমন কিছু উপাদন আছে যা রান্না না করলে জরায়ুর ভ্রূণের ক্ষতিসাধন করে।
    ফলে গর্ভপাত হওয়ার সম্ভাবনা থাকে। কিন্তু ভালোভাবে সিদ্ধ করলে এসব ক্ষতিকারক উপাদান নষ্ট হয়ে যাওয়ায় এগুলো কোনো সমস্যা সৃষ্টি করে না। গর্ভাবস্থায় আনারসও ঝুঁকিপূর্ণ। গর্ভাবস্থায় সর্বোত্তম ব্যায়াম সোজা হয়ে দ্রুত হাঁটা এবং ব্রিদিং এক্সারসাইজ বা শ্বাস-প্রশ্বাসের ব্যায়াম এটা সহজ ও নিরাপদ ব্যায়াম।
    হবু মায়ের মানসিক স্বাস্থ্য সুরক্ষার জন্য প্রাকৃতিক নির্মল পরিবেশে হাঁটা, চিত্তবিনোদনের ব্যবস্থা, নিয়মিত ধর্ম পালন, পরনিন্দা বা পরচর্চা না করা, অনৈতিক কোনো ভাবনা মনের মধ্যে না আনা, এছাড়াও ধূমপায়ীদের থেকে দূরে থাকা, ভাইরাসজনিত রোগে আক্রান্ত কারো সংস্পর্শে না আসা উচিত।

    No comments:

    Post a Comment